Senior Citizen Benefits: ভারতে প্রবীণ নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। সিনিয়র সিটিজেন নিউ বেনিফিটস ২০২৫ নামক এই নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের বয়স্ক মানুষদের আর্থিক সুরক্ষা, উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং কর ছাড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আপনার বয়স যদি ৬০ বছরের বেশি হয় বা আপনি যদি অবসরের পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে এই প্রকল্পটি আপনার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে।
২০২৫ সালের মূল ঘোষণাগুলি
কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২৫ সালের বাজেটে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে, যা তাদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করে তুলবে।
- TDS ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি: সুদের আয় থেকে উৎসে কর কর্তনের (TDS) সীমা বাড়িয়ে ₹১ লক্ষ করা হয়েছে। এর ফলে, যদি কোনও প্রবীণ নাগরিকের মোট আয় ১ লক্ষ টাকার কম হয়, তবে তাকে আর আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে হবে না।
- পেনশন বৃদ্ধি: ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় বার্ধক্য পেনশন যোজনার (IGNOAPS) অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারের মাসিক পেনশন ₹২০০ থেকে বাড়িয়ে ₹৫০০ করা হয়েছে। এছাড়াও, কিছু রাজ্য সরকার প্রতি মাসে ₹৫,০০০ পর্যন্ত অতিরিক্ত পেনশন দিচ্ছে।
- SCSS-এ আকর্ষণীয় সুদ: সিনিয়র সিটিজেনস সেভিংস স্কিম (SCSS)-এ ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের জন্য বার্ষিক ৮.২% হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে, যা প্রতি তিন মাস অন্তর প্রদান করা হয়।
- পরিবহণে ছাড়: রেল এবং বাস ভ্রমণে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ৫০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও, সরকার স্বাস্থ্য, আবাসন, কর্মসংস্থান এবং বীমা সংক্রান্ত চারটি নতুন কল্যাণমূলক প্যাকেজ চালু করেছে, যা ইতিমধ্যেই দেশের ১০ কোটির বেশি বয়স্ক নাগরিককে উপকৃত করতে শুরু করেছে।
কারা এই সুবিধাগুলির জন্য যোগ্য?
এই প্রকল্পের সুবিধাগুলি পেতে হলে আবেদনকারীদের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে।
- SCSS-এর জন্য: আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ৬০ বছর হতে হবে। যারা স্বেচ্ছাবসর (VRS) নিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে বয়স ৫৫ বছর হলেও চলবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই ভারতীয় বাসিন্দা হতে হবে।
- নতুন পেনশন যোজনার জন্য: BPL (দারিদ্র্যসীমার নীচে) পরিবারের ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী সদস্যরা এই পেনশনের জন্য যোগ্য। আবেদনকারীর আধার কার্ড লিঙ্ক থাকা এবং বার্ষিক আয় ₹১ লক্ষের কম হওয়া আবশ্যক।
- স্বাস্থ্য সুবিধা: আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের অধীনে সমস্ত প্রবীণ নাগরিক, তাদের আয় নির্বিশেষে, স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য যোগ্য।
- কর ছাড়: শুধুমাত্র ভারতের বাসিন্দা সিনিয়র সিটিজেন (৬০ বছরের বেশি) এবং সুপার সিনিয়র সিটিজেন (৮০ বছরের বেশি) এই সুবিধা পাবেন। অনাবাসী ভারতীয়রা (NRI) এর আওতায় পড়বেন না।
আবেদন করার জন্য NSAP পোর্টাল বা স্থানীয় তহসিল অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। আবেদন প্রক্রিয়া মূলত ডিজিটাল হওয়ায় প্রবীণদের জন্য এটি অনেক সুবিধাজনক।
প্রকল্পের নিয়মাবলী এবং প্রভাব
এই নতুন প্রকল্পগুলির নিয়মাবলী অত্যন্ত সহজ এবং স্বচ্ছ। SCSS-এর মেয়াদ ৫ বছর, যা আরও ৩ বছরের জন্য বাড়ানো যেতে পারে। তবে, সময়ের আগে টাকা তুললে ১-২% জরিমানা দিতে হবে। পেনশন প্রতি ছয় মাস অন্তর সরাসরি সুবিধাভোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে (DBT) পাঠানো হয়।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। SCSS-এ বিনিয়োগ করলে আয়করের ধারা 80C-এর অধীনে ₹১.৫ লক্ষ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। যৌথ অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ₹৩০ লক্ষ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা সম্ভব।
এই প্রকল্পগুলি প্রবীণদের জীবনে একটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, SCSS-এ ₹৩০ লক্ষ টাকা জমা রাখলে ৮.২% হারে বার্ষিক ₹২৪,৬০০ রিটার্ন পাওয়া যাবে। ভ্রমণ সংক্রান্ত ছাড়ের ফলে বয়স্কদের মধ্যে একাকীত্ব ৩০% পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে বলে সমীক্ষায় জানা গেছে। কর ছাড়ের ফলে তাদের হাতে অতিরিক্ত ১৫-২০% সঞ্চয় থাকবে, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে।
